ডিমলায় তিস্তা নদীতে চলছে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব
মোঃ ফেরদৌসকিবরিয়া (নয়ন) সম্পাদক ও প্রকাশক :-
নীলফামারীর ডিমলায় তিস্তা নদীতে পাথর উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। এর ফলে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়ে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হচ্ছে তিস্তা পাড়ের সাধারন মানুষ। তিস্তা পাড়ের বাসিন্দা ও স্থানীয়রা বলছেন, একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে নদী থেকে পাথর তুলে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। নির্বিচারে বালু-পাথর উত্তোলনের ফলে নদীভাঙন সপ বর্ষাকালে আকস্মিক বন্যা এবং ফসলি জমি, ঘরবাড়ি নদী গর্ভে চলে যাচ্ছে।
স্থা নীয়দের অভিযোগ, প্রায় দুই মাস যাবত তিস্তা নদী ও সংলগ্ন এলাকায় মহা উৎসবে চলছে বালু ও পাথর উত্তোলন। অবৈধ এই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করায় এই চক্রের হাতে নাজেহাল হয়েছেন অনেকেই। প্রশাসনকে জানিয়েও থামানো যায়নি তাদের দৌরাত্ম্য।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর দুই পাড়ের গ্রামগুলো নদীভাঙনের কবলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে। ভাঙন এলাকায় শ্যালোই ঞ্জিন চালিত নৌকা লোহার তৈরি যন্ত্র দিয়ে নদীর তলদেশে গভীর গর্ত করে পাথর উত্তোলন করছে এলাকার একাধিক প্রভাবশালী চক্রের ছত্রছায়ায় শ্রমিকরা।
নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা জানান, তিস্তা ব্যারাজের আশপাশ, তিস্তা বাজার, তেলির বাজার চরখড়িবাড়ি, বাইশপুকুর, কালিগঞ্জ, ভেন্ডাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় পাথর উত্তোলনে প্রায় ১৫ টি প্রভাবশালী চক্র জড়িত। রয়েছে।
সম্প্রতি তিস্তা ব্যারেজের উজানে তেলির বাজার, ছোটখাতা ও ভাটিতে ডালিয়া বাইশপুকুর এলাকায় দেখা যায়, শ্রমিকেরা বেলচা, কোদাল ও শাবল ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করে অন্তত অর্ধশতাধিক নৌকায় বোঝাই করেছেন। পরে সে সব পাথর বিক্রির জন্য ট্রাষ্ট্ররে করে নিয়ে যাওয়া হয় ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনে তিস্তা সেচনালার ধারে স্তুপ করার জন্য।
বাইশপুকুর এলাকায় নদীর যে স্থানে পাথর তোলা হচ্ছে তার ৫০০ মিটার উজানে তিস্তা ব্যারেজ। পাশেই নদীর ভাংগন রোধে ৭
কোটি টাকা ব্যায়ে তীরে জিওব্যাগ ফেলছে ডালিয়া পাউবো কর্তৃক নিযুক্ত ঠিকাদাররা।
পাথর উত্তোলনকারীরা জানান, নৌকা চলন্ত অবস্থায় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাখা দিয়ে নদীর তলদেশের বালু সরিয়ে পাথর তুলে পানির ওপরে নিয়ে আসা হয়। এভাবেই নদীর বিভিন্ন স্থানে অর্ধশতাধিক সক্রিয় টিম পাথর উত্তোলন করছে। উত্তোলিত পাথর ৪০-৫০ টাকা সিএফটি দরে স্থানীয় সিন্ডিকেটটি ক্রয় করে জমজমাট ব্যবসা করে আসছে।
আর সিন্ডিকেটের এসব পাথর চরা মূল্যে ১০০-১২০ টাকায় বিক্রি করে পাথর ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারের কাছে বলে জানান পাথর শ্রমিক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
পাথর পরিবহনকারী একটি ট্রাক্টরের চালক মনিরুল ইসলাম জানান, তারা ভাড়া চুক্তিতে এক মাস ধরে পাথর পরিবহন করছেন। ডালিয়া বাজারের শহিদ ইসলাম তাঁদের নিযুক্ত করেছেন।
এ বিষয়ে শহিদ বলেন, যারা নৌকার মালিক তারাই পাথর তুলছে। আমি বিভিন্ন দলের কাছে
প্রতি সিএফটি পাথর ৬৯ টাকায় কিনে ৭১ টাকা দরে ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। আমার মতো অনেকেই তিস্তা নদীর পাথর প্রতিদিন। উত্তোলনকারী দলগুলোর কাছ থেকে কিনে নেন। শহিদ জানান, গত ৫ বছর নদীতে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আবার জোরে সোরে শুরু হয়েছে।
বাইশপুকুর এলাকার মাজেদুল ইসলাম বলেন, গত এক সপ্তাহে নদীর ভাঙনে তার ৩ বিঘা পাকা ভুট্টা ক্ষেত বিলীন হয়ে গেছে। আর ও ২ বিঘা ফসলি জমি ভাঙনের মুখে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলি অমিতাভচৌধুরী বলেন, নদীর বালু, পাথরের দায়িত্ব আমাদের না। যারা পাথর বালু উত্তোলন করছে তাদের শাস্তি দেওয়ার দায়-দায়িত্ব উপজেলা প্রশাসনের।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরানুজ্জামান বলেন, নদী বা মাটির তলদেশ থেকে পাথর উত্তোলনের আইনগতভাবে কোন সুযোগ নেই। এটা হলে দ্রুত আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কোন মন্তব্য নেই
দৈনিক সময়ের পত্রিকা