মোঃ ফেরদৌসকিবরিয়া (নয়ন) জেলা নীলফামারী প্রতিনিধি:-
নীলফামারীর ডিমলায় হতদরিদ্র ও দুস্থ্যদের জন্য খাদ্য, পুষ্টির ঘাটতি পুরনে ভিডাব্লিউবি (ভিজিডি) এর পুষ্টি চাল দুর্গন্ধযুক্ত, নিম্নমানের এবং খাবার অনুপযোগী চাল সরবরাহের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দুর্গন্ধযুক্ত ও নিম্নমানের হওয়ায় খালিশা চাপানী ইউনিয়নে দুস্থ্য পরিবারের মহিলাদের মাঝে চাল বিতরণ কার্যক্রম মাইকিং করে বন্ধ রাখা হয়েছে। জানা গেছে, দেশের উত্তর অঞ্চলকে দুর্যোগ ও মঙ্গা পিরিত এলাকা চিহ্নিত করে নীলফামারীর ডিমলা
উপজেলাকে এর আওতায় এনে দুস্থ্য ও ছিন্নমূল পরিবার গুলোর খাদ্য ও পুষ্টি ঘাটতির জন্য পুষ্টিযুক্ত চাল প্রদানের ভিডাব্লটিবি প্রকল্প চালু করা হয়। আওয়ামীলীগ সরকার পতনের পর এ প্রকল্পের কর্মসূচি সাময়িক বন্ধ থাকেলেও গত জুন মাসে এক সাথে ৬ মাসের পুষ্টিযুক্ত চাল দুস্থ্যদেরকে প্রদান করা হয়। জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির এ প্রকল্পের আওতায় চলতি বছরে ডিমলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের হত দরিদ্র, ছিন্নমুল ও অসহায় দুস্থ্য পরিবার গুলোর মধ্য থেকে ৩ হাজার ৬৯৩ দুস্থ্য মহিলাকে ভিডাব্লিউবি (পূর্বের ভিজিডি) প্রকল্পের আওতায় এনে সুবিধাভোগীর তালিকা চূড়ান্ত করে গত ৩০ জুলাই/২৫ ইং উপজেলা নির্বাহী অফিসার অনুমোদন দেন। সুবিধাভোগী পরিবারগুলোকে
প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে পুষ্টি চাল প্রদানের কার্যক্রম চালু হয়ে অব্যাহত রয়েছে। সে হিসেবে জুলাই, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর সহ ৩ মাসের বিপরীতে ডিমলা সদর ইউনিয়নে ৫১৫ জন সুবিধাভোগীর বিপরীতে ৩ মাসের ৪৬.৩৫ মে.টন, খালিশা চাপানীতে ৩৯৯ পরিবারের বিপরীতে ৩ মাসের ৩৫..৯১ মে, টন, খগা খড়িবাড়ি ৩১০ জন সুবিধাভোগীর বিপরীতে ২৭.৯ মে, টন, বালাপাড়া ইউনিয়নে ৩৬৮ জনের ৩৩.১২মে, টন, পূর্ব ছাতনাইতে ২৬৯ জনের ২৪.২১ মে, টন, পশ্চিম ছাতনাইতে ২৭৯ জনের বিপরীতে ২৫.১১ মে. টন, ঝুনাগাছ চাপানীতে ৪১৭ জনের বিপরীতে ৩৭.৫৩ মে. টন, নাউতারায় ৪১৫ জনের বিপরীতে ৩৭.৩৫ মে. টন, গয়াবাড়ীতে ৩৮৫ জনের বিপরীতে ৩৪.৬৫ মে, টন এবং টেপা খড়িবাড়ি ইউনিয়নে ৩৩৬ জনের বিপরীতে ৩০.২৪ মে, টন চালসহ গত ৩ মাসের সর্বমোট ৩৩২.৩৭ মে, টন
ডিমলা (নীলফামারী) খালিশা চাপানী ইউপি কার্যালয়ে মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পূরবী রানী রায়কে নিম্নমানের চাল দেখাচ্ছেন ইউপি চেয়ারম্যান সহিদুজ্জামান সরকার -সংবাদ পুষ্টিযুক্ত চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপজেলা খাদ্য বিভাগ কর্তৃক নিযুক্ত ডিলার
মো. নুরনবী জানান, ডিমলা উপজেলা খাদ্য গুদাম থেকে যে চাল আমাকে দিয়েছে সেই চালে আমি পুষ্টি মিশ্রিত করে চেয়ারম্যানদের সরবরাহ করেছি। চাল নিম্নমানের হলে আমি দায়ী না।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) মো. নবাব আলী বলেন, আমি ডিলার নুরনবীকে ভাল চাল দিয়েছি। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদেরকে দুর্গন্ধযুক্ত ও নিম্নমানের চাল সরবরাহ করলে তার দায়-দায়িত্ব ডিলারকে নিতে হবে।
উপজেলা খাদ্য খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. মামুনার রশিদ জানান, ডোমার উপজেলার মেসার্স আখি রাইস মিলের স্বত্বাধিকারী মো. নুরনবী ডিমলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে পুষ্টিযুক্ত চাল সরবরাহের চুক্তিবদ্ধ ডিলার। তিনি সুবিধাভোগী কার্ড সংখ্যার বিপরীতে চাহিদা অনুযায়ী ডিমলা খাদ্য গুদাম থেকে চাল উত্তোলন করে চালে ১% ভিটামিন মিশ্রিত করে প্যাকেটজাত করে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ গুলোতে সরবরাহ করবেন। ইতিমধ্যে উক্ত ডিলারকে জুলাই, আগষ্ট সেপ্টেম্বরসহ ৩ মাসের বরাদ্দের ৩৩২.৩৭ মে, টন চাল প্রদান করা হয়েছে। ও
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আতিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ডিমলায় ভিডাব্লিউবির চাল দুর্গন্ধযুক্ত ও নিম্নমানের সরবরাহের বিষয়টির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সরে জমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ইতিমধ্যে পশ্চিম ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নে নিম্নমানের দূর্গন্ধযুক্ত চাল সুবিধাভোগী দুস্থ্যদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।
খগাখড়িবাড়ি ইউনিয়নে দুর্গন্ধযুক্ত, নিম্ন মানের খাওয়ার অনুপযোগী হওয়ায় সেপ্টেম্বর মাসের বরাদ্দের চাল ফেরত দেয়া হয়েছে। খালিশা চাপানী ইউনিয়নে গত গত রোববার ভিডাব্লটিবি কর্মসূচির চাল বিতরণ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্তৃক তারিখ ধার্য থাকলেও দুর্গন্ধযুক্ত ও নিম্নমানের হওয়ায় মাইকে প্রচার করে বিতরণ বন্ধ রাখার বিষয়ে সুবিধাভোগীদের জানানো হয়েছে। খালিশা চাপানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সহিদুজ্জামান সরকার জানান, ভিডাব্লডিবি সুবিধাভোগীদের জন্য তার ইউনিয়নে সরবরাহকৃত চাল দুর্গন্ধযুক্ত, নিম্নমানের ও খাওয়ার অনুপযোগী হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী মহোদয় কে অবগত করে চাল বিতরণ বন্ধ রাখা হয়েছে। চাল বিতরণ বন্ধ রাখার কারণও সুবিধাভোগীদের মাইকিং করে জানানো হয়েছে। তিনি আরো জানান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা আমার ইউনিয়নে সরবরাহকৃত চাল স্বচক্ষে দেখার জন্য পরিদর্শনে এসেছেন।
মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা পূরবী রানী রায়, খালিশা চাপানী ইউনিয়নে ভিডব্লিউবি এর দুস্থ্যদের জন্য দুর্গন্ধযুক্ত, নিম্ন মানের চাল সরবরাহের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেছেন। ইতিমধ্যে, ছাতনাই, পূর্ব ছাতনাই ও নাউতারা সহ ৩ টি ইউনিয়নে চাল বিতরণ করলে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের ছাতনাই গ্রামের বাসিন্দা মো. ঈমান আলী (৬৫) অভিযোগ করেন, আমার বউমা আয়শা সিদ্দকার নামে বড় কার্ড হয়েছে। গত সোমবার ইউনিয়ন কাউন্সিল থেকে ২ মাসের ৬০ কেজি চাল দিয়েছে। চালগুলি দুর্গন্ধ, পচা খাবার যোগ্য নয়, তাই টুনির হাটে নিয়ে ৩৫ টাকা কেজি দরে বেচে দিয়েছি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও কর্মসূচি বাস্তবায়নের সভাপতি মো. ইমরানুজ্জামান জানান, নিম্নমানের ও দূরগন্ধযুক্ত চাল সরবরাহের বিষয়ে চেয়ারম্যানগন অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খাদ্য কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ডিলারকে ডাকা হয়েছে কারন জানতে কেন নিম্নমানের চাল সরবরাহ করা হলো। তিনি আরো জানান, মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. নায়েরুজ্জামানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) জ্যোতি বিকাশের সাথে কথা বলতে বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে এ বিষয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের সাথে কথা বলেছি। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত চাল বিতরণ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
দৈনিক নতুন সময়ের পত্রিকা